ফেনী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চট্টগ্রামের আলোচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার পলাতক এই আসামিকে গতকাল ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ফেনীর সুলতানপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানটি তার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সফলতা। তিন মাসের মধ্যে এটি তার নেতৃত্বে পরিচালিত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানগুলোর মধ্যে একটি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা এর আগেও বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছেন, যা চট্টগ্রামবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। ঘটনার পটভূমি গত ১৬ জুলাই, দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের ষোলোশহর ২ নম্বর গেইট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাত্র-জনতার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি বর্ষণ করেন মিঠুন চক্রবর্তী ও তার সহযোগীরা। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালানো হয় এবং ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার সেই মর্মান্তিক দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পিস্তল হাতে ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা পড়লে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। চট্টগ্রামের সন্ত্রাসের চেনা মুখ গ্রেফতারকৃত মিঠুন চক্রবর্তী চকবাজার ও কাতালগঞ্জ এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমি দখল, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। মিঠুন চক্রবর্তী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এবং আলোচিত সন্ত্রাসী নুর মোস্তফা টিনুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
গ্রেফতারের নাটকীয়তা
মিঠুন চক্রবর্তীর অবস্থান নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরে গোপন নজরদারি চালায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। একাধিক সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে ফেনী থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান: দৃঢ়তার প্রতীক ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাঁচলাইশ থানা এলাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা অনেকটাই কমে এসেছে। গত তিন মাসে তিনি একাধিক বড় অপরাধীকে গ্রেফতার করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন কাতালগঞ্জ এলাকার কুখ্যাত চাঁদাবাজ রাজীব, সন্ত্রাসী জসিম ও নাসির। তার কঠোর মনোভাবের কারণে অপরাধীরা এলাকায় আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয়দের প্রশংসা স্থানীয়রা বলছেন, “ওসি সোলাইমান দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের এলাকায় শান্তি ফিরেছে। আগে রাতে চলাফেরা করাই ছিল আতঙ্কের বিষয়, এখন সেই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।” একজন সমাজসেবক জানান, “মিঠুন চক্রবর্তী দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার গ্রেফতার আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়।” পরবর্তী পদক্ষেপ পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানিয়েছেন, “মিঠুন চক্রবর্তীকে আজ আদালতে হাজির করা হবে এবং রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র আইনসহ আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে।” পুলিশের এই অভিযান যে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানের এই ধারাবাহিক সাফল্য চট্টগ্রাম নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলেই আশা করা হচ্ছে। পাঁচলাইশ থানার ওসি সোলায়মানের অঙ্গীকার- সন্ত্রাসীদের নির্মূল না করে পিছপা হবো না" চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এখন সন্ত্রাস দমনে এক দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক। সম্প্রতি আলোচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর গ্রেফতারের পর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান জানিয়ে দিয়েছেন—এ অভিযান কেবল শুরু। দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "শুধু মিঠুন নয়, একে একে সকল সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানও চলমান রয়েছে। বিশেষ করে টিনু বাহিনীর প্রধান নুর মোস্তফা টিনু এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের গ্রেফতার করতে আমরা সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।" ওসি সোলায়মান আরও বলেন, "এই থানাকে সন্ত্রাসমুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা কাজ করছি। পাঁচলাইশ হবে নিরাপদ এলাকা, যেখানে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারবে। মাননীয় পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেবের নেতৃত্বে আমরা পুলিশের সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।" টিনু বাহিনীর ছায়া: থাবা গুটিয়ে আনার প্রচেষ্টা পাঁচলাইশ এলাকা দীর্ঘদিন ধরে নুর মোস্তফা টিনু বাহিনীর নানা অপকর্মের জন্য আলোচিত। টিনু এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ওসি সোলায়মান জানালেন, "টিনু বাহিনীকে পুরোপুরি নির্মূল করতে আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষ যাতে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে না থাকে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।"
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা পাঁচলাইশ থানার সাম্প্রতিক সফল অভিযানের ফলে এলাকার মানুষ আশার আলো দেখছে। ওসি সোলায়মান বলেন, "অপরাধীরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, এই থানায় তাদের জন্য কোনো আশ্রয় নেই। আমরা জনগণের পাশে থেকে কাজ করছি।" স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "এতোদিন যারা এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তাদের ধরতে ওসি সোলায়মান যেভাবে অভিযান চালাচ্ছেন, তাতে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি।" সম্মিলিত উদ্যোগের বার্তা ওসি সোলায়মানের ভাষায়, "আমাদের পুরো পুলিশ বাহিনী একযোগে কাজ করছে। থানার প্রত্যেক সদস্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, চট্টগ্রাম থেকে সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে ফেলতে আমরা এক ইঞ্চি পিছু হটবো না।" পাঁচলাইশ থানার এই অভিযান চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওসি সোলায়মানের নেতৃত্বে এক নতুন সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় আছেন পাঁচলাইশবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com