গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায় মিথ্যা অভিযোগে জড়ানোর প্রতিবাদে সুষ্ঠু তদন্ত ও অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন দুই ভাই। তারা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করে নির্দোষ প্রমাণের দাবি জানান। অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে তাদেরকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মামলার পটভূমি: মামলাটি (মামলা নং-৩১/২১২, তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২৪) পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা হয়, যার ধারাগুলো— ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি। অভিযোগের মূল আসামি হিসেবে নাম উঠে এসেছে মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা (৫৬) ও তার ছোট ভাই নুরুল আমিন (৩৯)-এর। তারা চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন পূর্ব ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা। মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা তার অভিযোগে জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছে। সেদিন বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে এসব সহিংস ঘটনার সাথে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ: নুরুচ্ছাফা বলেন, “আমি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলাম এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলাম। স্কুল-কলেজ জীবন থেকেই আমি ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সৌদি আরব থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি এবং আন্দোলনের সমর্থনে চট্টগ্রামের রাজপথে উপস্থিত ছিলাম। ৫ আগস্ট আমি বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকায় আন্দোলনে ছিলাম। আমার আন্দোলনের বক্তব্যের ভিডিও প্রমাণ ও গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারও সংরক্ষিত আছে। তিনি দাবি করেন, “শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় আমি দৃঢ়ভাবে আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। অথচ আমার মতো নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র।” ব্যক্তিগত শত্রুতার অভিযোগ: নুরুচ্ছাফা আরও অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে মামলায় ফাঁসানোর মূল কারণ ব্যক্তিগত বিরোধ। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি নেতা পরিচয়ধারী হাসান ওসমানের সাথে তার জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধ রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসান ওসমান পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বাদীকে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি রাজনৈতিক শত্রুতা ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নই।” সুষ্ঠু তদন্ত ও অব্যাহতির দাবি: লিখিত আবেদনে নুরুচ্ছাফা পুলিশের আইজিপি এবং পুলিশ কমিশনারের ঘোষণার উল্লেখ করে বলেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং যথাযথ তদন্ত ছাড়া কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান না করা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হবে এবং আমাদের নির্দোষ প্রমাণিত হবে।”তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “মিথ্যা তথ্যদাতা এবং আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি আমাদেরকে এই মিথ্যা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।” উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। নির্দোষ মানুষকে হয়রানির অভিযোগের তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষদের মুক্তি এবং দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে।
প্রতিবেদকের মন্তব্য ও মিথ্যা মামলার শিকার নুরুচ্ছাফার বক্তব্য মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আটকে থাকা নুরুচ্ছাফা তার ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার অপরাধ? সত্য প্রকাশ করাই যদি আমার অপরাধ হয়, তবে আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় লড়াই করে যাব।” দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily Banner-এর প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আজকের সমাজে সত্য বলা যেন অভিশাপ। মিথ্যা ও অপশাসনের রাজত্ব চলছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার জন্য মিথ্যা মামলা আর হয়রানি এক প্রকার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের দায়িত্ববান ভূমিকা এই অন্ধকার সময়ে আমাদের একমাত্র আশার আলো। আমি আশাবাদী যে সত্য কখনো চাপা পড়ে থাকবে না, আর সংবাদকর্মীদের নির্ভীক কলমই সেই সত্যকে তুলে ধরবে।” নুরুচ্ছাফা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে যারা আমাকে দমানোর চেষ্টা করছে, তাদের আমি বলতে চাই—অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না। আইনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু বিচার চাই সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগের।” তার এই বক্তব্য যেন এক ক্ষতবিক্ষত মানুষের আর্তনাদ, যে এখনও সত্যের পথে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com