ড. অনুপম সেন, যিনি বাংলাদেশে শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত, একজন গুণী সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। তার জ্ঞান, মেধা, এবং সততার জন্য তিনি সর্বমহলে শ্রদ্ধার পাত্র। অনেকের বিশ্বাস, ঢাকায় বা দেশের বাইরে অবস্থান করলে হয়তো তিনি নোবেল পুরস্কারও পেতে পারতেন। তবুও, চট্টগ্রামের মাটিতে থেকে তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন এবং সমাজের অসংগতি নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন। কিন্তু আজ এক অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে তাকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
এই ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। তবে, এই বিদায়ের পেছনে কিছু প্রশ্ন ও বাস্তবতা উঠে এসেছে, যা ড. অনুপম সেনের মতো একজন মহান ব্যক্তিত্বের নামেও কালিমা লেপন করেছে। একটি বেআইনি ভিত্তি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম থেকেই রয়েছে অনিয়ম ও বেআইনির ছাপ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা হলেও, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এটি কার্যত তার পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্যাম্পাসটি স্থাপিত হয়েছিল সিটি করপোরেশনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস স্টেশনের ওপর। এটি কেবল আইন পরিপন্থী নয়, শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণও ছিল। তবুও, ড. অনুপম সেন এই প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন, যা তার মতাদর্শ ও নীতিবোধের সঙ্গে অসঙ্গত। অবৈধ স্থাপনার দায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শাখা স্থাপন করা হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে, যার মধ্যে অনেকগুলো ছিল অবৈধ। প্রবর্তক মোড়ের শাখা ক্যাম্পাসটি নালা ভরাট করে নির্মিত হওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনীর তদন্তে অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় এই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়া জিইসি মোড়ে একটি জমি জোরপূর্বক দখল করে আরেকটি শাখা স্থাপন করা হয়, যেখানে আগে অসহায় মানুষজন ব্যবসা করতেন। সেই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ড. অনুপম সেন এইসব অনিয়ম ও দখলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি বরং তিনি সেগুলো কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিবেকের প্রশ্ন ড. অনুপম সেন, যিনি সমাজের অসংগতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থেকেছেন, কীভাবে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিলেন? একজন বিবেকবান শিক্ষাবিদ হয়েও তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্ষমতার অপব্যবহারের নীরব সাক্ষী হলেন কেন? তিনি কি জানতেন না, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি একটি বেআইনি কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে?
অপমানের কারণ এবং পরিণতি
আজ যখন ড. অনুপম সেনকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলো, তখন আমাদের জন্য এটি একটি তিক্ত বাস্তবতা। এটি যেমন একটি শিক্ষাবিদকে অসম্মান করার ঘটনা, তেমনি তার অতীতের সিদ্ধান্তগুলোর ফলাফলও। ড. অনুপম সেনকে অপমান করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে, তিনি যদি নিজের বিবেকের তাড়নায় এই অন্যায় ও অনিয়মগুলো শুরুতেই প্রত্যাখ্যান করতেন, তাহলে হয়তো আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।ড. অনুপম সেনের বিদায় আমাদের সামনে অনেক প্রশ্ন তুলেছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতা, আইন মানা এবং ব্যক্তিগত বিবেকবোধের বিষয়ে। আমাদের উচিত, তার মতো মানুষদের সম্মান করা। কিন্তু সেই সম্মানের পাশাপাশি তাকে এই প্রশ্নেরও মুখোমুখি করতে হবে—কেন তিনি অন্যায়ের ছায়ায় নিজেকে যুক্ত হতে দিলেন? এই ঘটনাটি শুধু তার ব্যক্তিগত বিদায়ের কাহিনি নয়, বরং আমাদের সমাজের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবিদদের নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com