চট্টগ্রামের মিষ্টি ভোরে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো দিনের শুরু। এমন দিনে স্মৃতির সরণি বেয়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে জীবনের শুরুতে। আমার সাংবাদিকতা, লেখালেখি এবং টেলিভিশন উপস্থাপনার দীর্ঘ পথচলা যেন এক শিহরণ জাগানো গল্প, যেখানে আনন্দ, কষ্ট, লড়াই আর সাফল্যের সুর বেজে ওঠে।লেখালেখির শুরু ১৯৮৮ সাল। বয়স তখন কম, কিন্তু স্বপ্ন ছিল বিশাল। প্রথমে ম্যাগাজিনে লেখা দিয়ে হাতেখড়ি। রূপম চক্রবর্তীর সম্পাদিত একটি ছোট ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। কী যে আনন্দ! সেই দিনগুলো আজো মনে পড়ে। ঢাকা থেকে আসা বিভিন্ন ম্যাগাজিনেও লেখা জমা দিতাম। কিন্তু মূলত আমি পরিচিত হতে শুরু করি অপরাধ জগতের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে। এক সময় চট্টগ্রামের সমাজ আর রাজনীতির অঙ্গনে একটি বিশেষ ম্যাগাজিন ‘চট্টলচিত্র’-এর নাম ছড়িয়ে পড়ে। আমি এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম। সেই দিনগুলিতে কত উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছি! মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাংবাদিক জামাল উদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে ‘চট্টলচিত্র’-এর যাত্রা শুরু করেছিলাম। প্রথম সংখ্যার প্রকাশনী উৎসবে মোঘল বিরিয়ানির তৃপ্তি আজো মনে পড়ে। এরপর 'সাপ্তাহিক সময়ের আলো' পত্রিকা চালু করি, যা আজো চলছে। সাংবাদিকতা: লড়াই ও অর্জন সাংবাদিকতার ময়দানে পদার্পণ করে আমি বুঝেছিলাম, এটি কেবল একটি পেশা নয়, বরং একটি আন্দোলন। সংবাদপত্রের পাতা শুধু খবরের জন্য নয়, এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মঞ্চ। দীর্ঘ তিন দশক ধরে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতে কাজ করছি। 'দৈনিক আজাদী', 'দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ', এবং 'দৈনিক পূর্বকোণ'-এ কলাম লিখেছি। এখন 'দৈনিক সকালের সময়'-এ বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। দেশের বাইরের পত্রিকাগুলোতেও লিখেছি। তবে যা কিছুই লিখি, সবই আসে এক জায়গা থেকে—সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা।
কিছু তথাকথিত প্রেসক্লাব নেতা ও সাংবাদিক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবাদিকতার মঞ্চকে কলুষিত করেছেন। তারা নিজেরা সাংবাদিকতার সনদ বিলিয়ে চলেছেন, যেন এরাই সাংবাদিক সৃষ্টির কারিগর! অথচ প্রকৃত সাংবাদিকতার মাপকাঠি এসব নয়। আমার কলমের প্রতিবাদ এদের বিরুদ্ধে সবসময় অবিচল।
টেলিভিশন উপস্থাপনা: নতুন এক অধ্যায় ২০১৭ সালে বাংলা টিভি থেকে ‘চট্টগ্রাম সংলাপ’ নামে একটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব পেলাম। কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠল চট্টগ্রামের মানুষের মনের কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম। এরপর 'সচিত্র চট্টগ্রাম', 'কিছু কথা কিছু গান', এবং 'কথার কথা'-এর মতো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করলাম।
আমার অনুষ্ঠান গুলো এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বাংলা টিভি দেশ-বিদেশে আলাদা পরিচিতি পায়। নিজের গবেষণা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি সবসময় অনুষ্ঠানগুলোকে তথ্যবহুল ও প্রাসঙ্গিক রাখতে চেষ্টা করেছি। তবে মাঝেমধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকদের ঈর্ষার শিকার হয়েছি, যা একজন সত্যিকারের পেশাদারের কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক।
লেখক জীবন: শব্দের জাদুকরী ভুবনে পড়াশোনা সবসময় ছিল আমার শক্তি। এ পর্যন্ত অন্তত পঞ্চাশ হাজার বই পড়েছি। এসব পড়া থেকেই একদিন লেখক হয়ে উঠলাম। আমার প্রথম বই 'বাঁকা কথা' প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। আজ আমার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩০-এর বেশি। ‘নারী কথা’ বইটি নিয়ে একটি স্মৃতি বলি। ২০০৪ সালে কাতারে সৌদি বিদ্রোহী রাজকন্যা সুরাইয়ার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেটি বইটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমার প্রথম উপন্যাস ‘নির্মম নিয়তি’ শীঘ্রই নাটক হিসেবে প্রচারিত হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আমার একটি গান এখন আর্কাইভে সংরক্ষিত।
প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার সাংবাদিকতার এই দীর্ঘ পথচলায় আমি সবসময় চেষ্টা করেছি সৎ থাকতে। আমার বিশ্বাস, সাংবাদিকতা কখনো তোষামোদ বা দালালির জায়গা হতে পারে না। আমি কোনো প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য না হয়েও লেখালেখির মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমার লেখা বই 'সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা' এক অনন্য দলিল। যারা সাংবাদিকতা নিয়ে বিভ্রান্ত, তারা এটি পড়লেই প্রকৃত সাংবাদিকতার মূল্য বুঝতে পারবেন। আমার প্রশ্ন সহজ—প্রেসক্লাবের সদস্য না হলে কি কেউ সাংবাদিক হতে পারে না? এই সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। আমার এই যাত্রা কেবল আমার নয়। এটি আমার সময়, সমাজ, এবং মানুষের কাহিনি। আমি চাই, আমার লেখা ও কাজ যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি আলোকিত পথ দেখাতে পারে।
লেখক:সাংবাদিক, গবেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com