ঢাকার সাহিত্যপ্রেমী এক কোণায় ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল এক নীরব বিপ্লব। বাংলা সাহিত্যের আকাশে উদিত হয় এক নতুন তারা, যার নাম ‘গল্পকার’। এটি শুধু একটি মাসিক পত্রিকা নয়, বরং বাংলা গল্পভিত্তিক সাহিত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করে আজ বাংলা সাহিত্যের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছেন, এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। তার দক্ষ নেতৃত্বে গল্পকার এখন আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিত।
মুহাম্মদ মহিউদ্দিন শুধু একজন সম্পাদক নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। বাংলাদেশের যুবসমাজকে তিনি কলমের শক্তি দিয়ে বদলে দিতে চান। গল্পকারের পৃষ্ঠায় তিনি তুলে এনেছেন শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখকদের সৃজনশীলতা, প্রথিতযশা লেখকদের গল্পের সঙ্গে নবীনদের গল্পের সমন্বয় ঘটিয়ে তৈরি করেছেন এক নতুন ধারা। ২০১২ সালে কোরিয়ায় বিশ্ব লেখক সম্মেলনে আমারা দুইজন একসাথে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলাম। সেই স্মৃতি আজও জ্বলজ্বল করে মনে। তার পরিশ্রম, প্রতিভা, এবং সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা দেখেছি কাছ থেকে। আজ সেই মানুষটি গল্পকারকে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। গল্পকার এখন বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে চারটি ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বে এক স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে। পত্রিকার পাশাপাশি গল্পকার প্রকাশনা থেকে দেশের অসংখ্য খ্যাতিমান লেখকের বই প্রকাশিত হচ্ছে। বিদেশি সাহিত্য অনুবাদেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মুহাম্মদ মহিউদ্দিনের নিরলস প্রচেষ্টায় এই কাজগুলো আজ সফলতার শীর্ষে। কয়েক দিন আগে আমি ঢাকার গল্পকার অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। গল্প বলার মধ্য দিয়ে তিনি যেন তার পত্রিকার আত্মা প্রকাশ করলেন। আন্তর্জাতিক সাহিত্য জগতে গল্পকারের স্থান তৈরির কথা শুনে গর্বে আমার বুক ভরে উঠেছিল।
মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ও গল্পকার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের কাজ আমাদের যুবসমাজকে কলমের শক্তি দিয়ে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। গল্পের জাদুকর মুহাম্মদ মহিউদ্দিনকে অভিনন্দন জানাই, যিনি এই পত্রিকা ও প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের গৌরবকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছেন। গল্পকার পত্রিকার জন্য লেখা – কিছু পরামর্শ গল্পকার পত্রিকা, যে পত্রিকাটি বাংলা সাহিত্যের অনন্য এক আবহ সৃষ্টি করেছে, সেখানে লেখার কথা ভাবলে, প্রথমেই মনে আসে একটি প্রশ্ন—আপনি কীভাবে এমন কিছু লিখবেন যা পাঠকের হৃদয়ে গভীর দাগ কাটবে? এই পত্রিকার প্রতি দায়িত্ববোধের সাথে একটি লেখা লিখতে হবে, যাতে এটি শুধু কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষী পাঠকদের কাছে এর মূল্য বোঝানো যায়। আপনার লেখা এমন হতে হবে যেন তা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়, এমনকি এই ব্যস্ত সময়ে যখন সবাই দ্রুত চলে, তখনও পাঠক থামবে, পড়বে এবং ভাববে। গল্পকার পত্রিকা কোনো সাধারণ সাহিত্য পত্রিকা নয়; এটি একটি ভাবনা, একটি কণ্ঠস্বর, যা নতুন লেখকদের কাছে অজানা জায়গায় আলো পৌঁছে দেয়। এটির মাধ্যমে পাঠকরা যেমন গল্পের মজাটুকু পান, তেমনি সাহিত্য ও সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। আপনার গল্পটি যেটি লেখার জন্য প্রস্তুত, তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকতে হবে। প্রথমত, এটি যেন পাঠকের মনে ছাপ ফেলে, এক ধরনের আবেগের সঞ্চার করে, যা তাঁকে ভাবতে বাধ্য করবে। লেখায় গুণগত মান এবং সাহিত্যিক শৈলী অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে, গল্পকারের পাঠকরা সাহিত্যিক গভীরতা, ভাষার মাধুর্য এবং সঠিক উপস্থাপনা পছন্দ করে।
গল্পকার পত্রিকা একধরনের প্ল্যাটফর্ম যা নবীন লেখকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে। এটি আপনাকে আপনার কল্পনা, চিন্তা, এবং সৃজনশীলতা প্রকাশ করার এক বিশাল সুযোগ প্রদান করে। লিখুন, নিজের গল্প তৈরি করুন, কিন্তু সে গল্পের মধ্যে যেন মানবিক অনুভূতির সঠিক প্রতিফলন থাকে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিকতা—এগুলি যেন লেখার মূল বিষয় হয়ে ওঠে। এই বিষয়গুলি নিয়ে একটি শুদ্ধ লেখনী তুলে ধরুন যা পাঠকদের জীবনে আলোকসজ্জা হয়ে উঠবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো—লিখতে থাকুন। গল্পকার পত্রিকায় আপনার লেখা প্রকাশিত হতে পারে, কিন্তু তার আগে আপনাকে আপনার লেখার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। গল্পকার যে পৃথিবীকে দেখানোর চেষ্টা করছে, আপনি সেই পৃথিবীর অংশ হতে পারেন। নতুন লেখকদের প্রতি পরামর্শ: কলম ধরুন, গল্প বলুন লেখালেখি একটি যাত্রা। এ যাত্রায় প্রথম পদক্ষেপটি ভয়হীন হতে হবে। নতুন লেখক কিংবা লেখিকাদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনার ভেতরে যে গল্পগুলো জমে আছে, সেগুলো প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটি গল্পের একটি নিজস্ব জীবন আছে। আপনার লেখা সেই জীবনের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠুক।গল্প বলতে হলে প্রথমে শুনতে হবে। চারপাশের জীবনের কান্না, হাসি, আনন্দ, বেদনা—সবকিছু গভীরভাবে অনুভব করুন। জীবনের গভীরতা যতটা বুঝতে পারবেন, আপনার গল্প ততটাই প্রাণবন্ত হবে। নিজের অনুভূতিগুলো কাগজে ফুটিয়ে তুলুন। লিখুন মনের কথা, হৃদয়ের কথা। প্রথমে লেখা ভালো না লাগলে হতাশ হবেন না। প্রতিটি সফল লেখকের শুরু ছিল ভুলে ভরা। লেখার ভুলগুলো শোধরানোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৃজনশীলতার প্রকৃত আনন্দ।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পড়ার অভ্যাস তৈরি করা। লেখক হতে হলে অবশ্যই ভালো পাঠক হতে হবে। বিশ্বসাহিত্য পড়ুন, নিজ ভাষার সেরা লেখকদের পড়ুন। তাদের লেখার শৈলী বোঝার চেষ্টা করুন। কিন্তু কখনোই তাদের নকল করবেন না। নিজস্ব সুরে, নিজস্ব ভঙ্গিমায় গল্প বলুন। তবেই পাঠক আপনার মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে পাবে। আরেকটি বিষয় হলো নিয়মিত লেখা। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় লিখুন। ছোট ছোট নোট হোক বা পূর্ণাঙ্গ গল্প, প্রতিদিন লিখতে লিখতে আপনার কলম সাবলীল হয়ে উঠবে। সবচেয়ে বড় কথা, সাহস হারাবেন না। আপনার গল্প প্রথমে অনেকে বুঝতে নাও পারে। তবু নিজের বিশ্বাসে অটল থাকুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি গল্পের একটি শ্রোতা থাকে। আপনার লেখাও কারো না কারো হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। লেখালেখি শুধু সৃজনশীলতার প্রকাশ নয়, এটি প্রতিবাদের ভাষাও হতে পারে। সমাজের অন্যায়, অবিচার, কিংবা ব্যক্তিগত যন্ত্রণাগুলো গল্পে তুলে ধরুন। আপনার কলম হতে পারে পরিবর্তনের হাতিয়ার। নতুন লেখকদের জন্য একটি কথা বিশেষভাবে বলি—লেখালেখি কোনো প্রতিযোগিতা নয়, এটি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। নিজের লেখাকে ভালোবাসুন, তাতে মনের শুদ্ধতা এবং আত্মার গভীরতা দিন। শেষ কথা, গল্প বলুন। কারণ, গল্পের মধ্য দিয়েই আমরা বেঁচে থাকি। জীবনের গভীরতা বুঝতে, অনুভব করতে এবং তা ভাগাভাগি করতে গল্পের কোনো বিকল্প নেই। আপনার গল্প আপনার পরিচয়। কলম ধরুন, গল্প বলুন, এবং সাহিত্যের অবারিত আকাশে উড়ান দিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com