পুলিশের পোশাকে দৃপ্ত পদচারণা, সাহসিকতায় অদম্য, শৃঙ্খলায় জ্ঞানী।
শাকিলা সুলতানা—নারী পুলিশের নেতৃত্বের মুখ,চট্টগ্রামের মাটি জানে তাঁর কর্মের সুখ। শান্তি আর ন্যায়ের দীপ্ত আলো হাতে, তিনি এগিয়ে চলেন নতুন ভোরের প্রাতে। পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ এখন আর ব্যতিক্রম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী সম্ভাবনার উদাহরণ। একসময় যে পেশাটি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য উপযোগী বলে বিবেচিত হতো, সেখানে নারীরা আজ সমান দক্ষতায় নিজেদের স্থান করে নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা সেই অগ্রগামী নারীদের একজন, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে নেতৃত্ব ও দায়িত্ব পালনে নারী-পুরুষের কোনো ভেদ নেই। শাকিলা সুলতানার ক্যারিয়ার পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বরং নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। বন্দর জোনে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর দক্ষ পরিচালনায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মামলার সফল নিষ্পত্তি হয়েছে। ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন থেকে শুরু করে দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তারে তাঁর নেতৃত্ব জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। তাঁর এই কাজ প্রমাণ করে, পুলিশ বাহিনীতে নারীরাই এখন পরিবর্তনের অন্যতম চালক।
শাকিলা সুলতানা বলেন, “আমাদের জন্য প্রতিটি দিনই নতুন এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু নারী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুধু পেশাগত সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রমাণ করা যে আমরা সমানভাবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারি।” এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে আরো এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। নারীরা এখন পুলিশ বাহিনীতে শুধু সংখ্যা বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ নন; তাঁরা দক্ষতা, মানবিকতা ও নেতৃত্বের মাপকাঠিতেও নিজেদের আলাদা করে তুলছেন। শাকিলা সুলতানা সেই ধারার পথিকৃৎ। তাঁর এই পথচলা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণার বার্তা। এটি স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে নারীরা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আরো বেশি দায়িত্ব পালন করবেন এবং শাকিলা সুলতানার মতো ব্যক্তিত্ব তাঁদের সেই পথচলার দিশারী হয়ে থাকবেন। এই পথচলার শুরু শুধু একটি ব্যক্তিগত যাত্রা নয়, এটি একটি জাতীয় অগ্রগতির সূচনা, যেখানে নারী ও পুরুষ সমানতালে এগিয়ে যাবে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে। শাকিলা সুলতানারা সেই সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছেন, যা আগামী প্রজন্মের নারীদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ জোনের দায়িত্ব পেয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা। পেশাগত দক্ষতা, দায়িত্ববোধ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি পুলিশের বিভিন্ন পদে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বন্দর জোনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর অসাধারণ ভূমিকা ইতিমধ্যেই সবার নজর কেড়েছে। নারী পুলিশ কর্মকর্তা হলেও, কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারী-পুরুষের সমান দক্ষতায় এই পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। শাকিলা সুলতানা ২৫তম বিসিএসের একজন মেধাবী কর্মকর্তা। এর আগে তিনি সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এবং বন্দর ট্রাফিক বিভাগে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে যোগদান করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি চট্টগ্রামের ইপিজেড, কর্ণফুলী, পতেঙ্গা ও বন্দর থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে এই অঞ্চলের সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। একাধিক ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
শাকিলা সুলতানার নেতৃত্বে কর্ণফুলীতে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে সংঘটিত জোড়া খুনের ঘটনা দ্রুত সমাধান হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে তাঁর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ জনগণের কাছে পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “পুলিশ জনগণের বন্ধু, শত্রু নয়। আমাদের কাজ জনগণের সেবা করা। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তথ্য দিয়ে আমাদের সাহায্য করলে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব।”
নারী হিসেবে পুলিশের কঠিন দায়িত্ব পালন করা সহজ নয়, কিন্তু শাকিলা সুলতানা দেখিয়েছেন, ইচ্ছা ও যোগ্যতা থাকলে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে থাকেন না। তিনি বলেন, “পুলিশ পেশায় নারীদের কাজের সুযোগ বাড়ছে, যা আমাদের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রতিটি নারীই তাঁর নিজস্ব দক্ষতা দিয়ে প্রমাণ করছে, তাঁরা এই পেশায় সমানভাবে অবদান রাখতে সক্ষম।”চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের কৃতি সন্তান শাকিলা সুলতানা। তাঁর ডাকনাম মিতু। তিনি চুনতি ডিপুটি বাড়ির মেয়ে এবং চুনতি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলহাজ্ব আমিন খান জুনু মিয়ার সুযোগ্য কন্যা। শৈশব থেকেই মেধাবী এই নারী পরবর্তীতে পুলিশে যোগদান করে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বন্দর জোনে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর নেতৃত্বে চার থানার পুলিশ সদস্যরা একাধিক মুলতবি থাকা মামলার দ্রুত তদন্ত ও নিষ্পত্তি নিশ্চিত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর কার্যক্রমে তাঁর দিকনির্দেশনা পুলিশ সদস্যদের কাজের মান উন্নত করেছে। এই সাফল্যের জন্য তিনি পেয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও। শাকিলা সুলতানার এই সাফল্য একক নয়, বরং বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ ও সফলতারই প্রতিফলন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে যখন প্রথম আটজন নারী কনস্টেবল পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন, তখন এই পেশায় নারীদের পথচলা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে নারীর সংখ্যা পেরিয়েছে ১৫ হাজার। শাকিলা সুলতানা এই অগ্রযাত্রারই একটি উজ্জ্বল নাম।
দক্ষতা, দায়িত্ববোধ এবং জনগণের প্রতি তাঁর নিবেদিত সেবা কেবল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ নয়, বরং পুরো দেশের জন্যই অনুপ্রেরণার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দক্ষিণ জোনে তাঁর নতুন দায়িত্ব পালনে তিনি পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরো সাফল্যের মাইলফলক স্থাপন করবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়।
বাংলাদেশে নারী পুলিশের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশে নারী পুলিশের যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম আটজন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন। তবে তখন তাঁরা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো পুলিশের ইউনিফর্মে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই ছোট পদক্ষেপ থেকে আজকের দিনে এসে বাংলাদেশ পুলিশে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এই অগ্রযাত্রা নারীর ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে নারীরা আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁরা কেবল অফিসের ফাইল চালানো কিংবা প্রোটোকল প্রদানেই সীমাবদ্ধ নন, বরং অপরাধ তদন্ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মানবপাচার প্রতিরোধ, এবং সংবেদনশীল মামলার নিষ্পত্তিতে তাঁদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানার মতো নারীরা পুলিশ বাহিনীতে নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। শাকিলা সুলতানা, যিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের দায়িত্ব পালন করে দক্ষতার নজির স্থাপন করেছেন, সেই নারীদেরই একজন। তাঁর সাফল্য শুধু একটি ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়; এটি নারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার গল্প। বন্দর জোনের মতো চ্যালেঞ্জিং এলাকায় তিনি দ্রুততার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছেন, সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করেছেন, এবং পুলিশ ও জনগণের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন।
তবে চট্টগ্রামে নারীদের পুলিশের পেশায় আসার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এখনো খুবই কম। একটি বৃহৎ বিভাগীয় শহর হিসেবে এখানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। শাকিলা সুলতানার মতো ব্যক্তিত্ব চট্টগ্রামের নারীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন। তাঁর সাফল্য যদি চট্টগ্রামের মেয়েদেরকে পুলিশে আসার সাহস জোগায়, তাহলে এই অঞ্চলে নারী পুলিশের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনই সমাজের নানা স্তরে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ কেবল একটি গৌরবময় অধ্যায় নয়, বরং এটি অপরাধ দমন ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। নারীরা তাঁদের মানবিকতা, ধৈর্য, এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। চট্টগ্রামের মেয়েরা যদি শাকিলা সুলতানার পথ অনুসরণ করে পুলিশে যোগ দেয়, তাহলে তাঁরা এই মহান পেশার অংশ হয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন।
আগামীতে পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা, সামাজিক সচেতনতা, এবং চট্টগ্রামের মতো এলাকায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নারীদের প্রতি পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহযোগিতা তাঁদের এই পেশায় আরো এগিয়ে আসার পথ সুগম করবে।
শাকিলা সুলতানার মতো নারীরা কেবল সফল পুলিশ কর্মকর্তা নন; তাঁরা নারীদের স্বপ্ন দেখার এবং তা পূরণের সাহস জোগানোর জীবন্ত প্রেরণা। তাঁর এই যাত্রা শুধু চট্টগ্রামের মেয়েদের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের নারীদের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ব্যুরো প্রধান ও যুগ্ম সম্পাদক
দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং
The Daily Banner গবেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com