দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শাসনামলের অবসান হলেও প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আজও রাহুমুক্ত হয়নি। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রগতির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কালাম আজাদ নিজের পদটি শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের পুত্র যুবলীগ নেতা নুরুল মাহমুদ সাদীর ঘনিষ্ঠতা ব্যবহার করে আবুল কালাম আজাদ একসময় ইস্টার্ন ক্যাবলসের সহকারী হিসাবরক্ষকের পদ থেকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত এমডি পদে উঠে আসেন। ওই সময়ে ইস্টার্ন ক্যাবলসে স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তা রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তদন্ত ছাড়াই ধামাচাপা পড়ে যায়।
অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় পাকিস্তান আমলের একটি পুরনো শেড সংস্কারে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিল করা হয়, যেখানে কেবল কিছু রং, নতুন টিন, মেঝেতে আংশিক টাইলস এবং দুটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছিল। একইভাবে একটি শো-রুম ঘষামাঝা করে, গ্লাস এবং শাটার ফিটিংয়ের জন্য ১২-১৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এছাড়া ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণ এবং তজ্জন্য ইকুইপমেন্ট কেনাকাটায় ১৫ কোটি টাকার একটি অলাভজনক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পেও মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
গাড়ি আমদানিতে দুর্নীতি
কৃষি অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে মিৎসুবিসি এল-২০০ মডেলের ১৩৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার সময় সিন্ডিকেট তৈরি করে অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করা হয়। এসব কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং মোবাইল ফোন কেনার জন্য অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়েছে। বিশেষত, কেয়া মটরস থেকে গাড়ি আমদানির ঘটনায় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কেয়া মটরস, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত, সেখান থেকে ৪০টি নিম্নমানের গাড়ি কিনতে বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকার গাড়ি ৪০ লাখ টাকায় কেনা হয়। এই চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আনন্দ ভ্রমণের অভিযোগ
আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণের নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থে আনন্দ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণে সাবেক শিল্পমন্ত্রীর পুত্রসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নিলেও প্রকৌশলীদের সেখানে রাখা হয়নি। গত ২১ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার এসটিএক্স করপোরেশনের সঙ্গে নিম্নমানের গাড়ি আমদানির একটি চুক্তি করা হয়। এই চুক্তিতে মন্ত্রীপুত্র, বিএসইসি চেয়ারম্যান, প্রগতির এমডি এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, তবে প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি।
প্রতিবাদ ও অভিযোগ অস্বীকার দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে শ্রমিক পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক নেতা জানান, “প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে চলছে, কিন্তু দুর্নীতির কারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” অন্যদিকে, এমডি আবুল কালাম আজাদ তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেয়া মটরস সেনাবাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত কিনা, তা আমার জানা নেই।” প্রকৌশলীদের চুক্তিতে না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব অনিয়মের কারণে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। নিম্নমানের গাড়ি আমদানির কারণে বাজারে চাহিদা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সরকারের কাছে প্রগতির দুর্নীতি বন্ধ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি উঠছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com