"লেখকের কথাঃ
‘সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা’ বইটি রচনা করার পেছনে আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য কাজ করেছে। একজন সাংবাদিক, গবেষক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমার প্রায় তিন দশকের অভিজ্ঞতায় যে জ্ঞান সঞ্চয় করেছি, তা পাঠকের কাছে তুলে ধরা আমার এই বই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য। সাংবাদিকতার উপর দেশ-বিদেশে অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। প্রতিটি বইয়ের আলাদা আলাদা বিশেষত্ব এবং গুরুত্ব আছে। তবুও মনে হয়েছে, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপটে এমন একটি বই থাকা প্রয়োজন, যা একদিকে তথ্যনির্ভর, অন্যদিকে ইতিহাসের আলোকে পাঠকদের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে নবীন সাংবাদিকদের জন্য এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীর যে ধরনের দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হয়, সেটি কেবল তত্ত্ব নয়, বরং অভিজ্ঞতার আলোকে উপস্থাপন করা সবচেয়ে কার্যকর।
এই বইতে সাংবাদিকতার শুরুর দিকের প্রয়োজনীয় শিক্ষা, সমস্যা, এবং তা কাটিয়ে উঠার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। সংবাদ সংগ্রহ থেকে লেখার কৌশল, উপস্থাপনার নান্দনিকতা থেকে সত্য প্রকাশের সাহস – প্রতিটি বিষয় এখানে সংক্ষিপ্ত অথচ গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণসহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।আমার বিশ্বাস, এই বইটি কেবল একটি সাধারণ গ্রন্থ হয়ে থাকবে না। এটি সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী, নবীন সংবাদকর্মী এবং এমনকি পেশাদার সাংবাদিকদেরও কাজে আসবে। কারণ এখানে কেবল তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে।
আমি মনে করি, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়; এটি একটি দায়িত্ব, যা সমাজের প্রতি একজন সাংবাদিককে পালন করতে হয়। সত্যকে তুলে ধরতে সাহস প্রয়োজন, আর সেই সাহস নির্ভীক মনোভাব থেকে আসে। আমার লক্ষ্য ছিল এমন একটি বই রচনা করা, যা পাঠককে সেই সাহস এবং নির্ভীক মনোভাব অর্জনে সাহায্য করবে।
যদি এই বই থেকে অন্তত একজন পাঠকও সত্যিকারের ন্যায়নিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারেন, তবে আমি মনে করব, আমার এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। পাঠকের ভালোবাসা, মতামত এবং গঠনমূলক সমালোচনাই এই বইয়ের প্রকৃত মূল্যায়ন।
পাশাপাশি কিছু বাস্তব সত্যি কথা পরামর্শ আকারে উপস্থাপন করছি-সত্য লেখার দায় কেউ মেনে নেয়, আবার কেউ মেনে নেয় না। কিন্তু মিথ্যা লেখার আনন্দে অনেকেই মেতে ওঠে। মনে রাখবেন, সত্য লেখার দায়ভার নিতে গেলে সমালোচনা, অপপ্রচার, এমনকি ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হতে হয়। একজন প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ হলো এসব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সত্য প্রকাশে অবিচল থাকা। মিথ্যা দিয়ে বদনাম করার তথাকথিত সাংবাদিকদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তারা সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অনুমান নির্ভর মিথ্যা প্রচার করে। আজকের লেখায় আমি সেইসব সাংবাদিকতার অপমানজনক রূপগুলো তুলে ধরতে চাই। সাংবাদিক হতে হলে কী প্রয়োজন?
সাংবাদিকতার প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতার কিছুটা শিথিলতা দেওয়া হয়। সাংবাদিকতার ইতিহাস জানলে বোঝা যায়, তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য প্রযুক্তির আবির্ভাব কীভাবে এই পেশার ভিত্তি শক্তিশালী করেছে। সংবাদ একসময় মৌখিকভাবে বণিক, নাগরিক এবং ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ছড়াত। প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারের পর সংবাদপত্র এই মাধ্যমকে শক্তিশালী করে। এরপর রেডিও, টেলিভিশন এবং একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাংবাদিকতা সর্বজনীন হয়ে ওঠে। আমার সাংবাদিকতার যাত্রা ১৯৮৭ সালে লেখালেখির মাধ্যমে শুরু হয়। স্কুলজীবন থেকে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আমার মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আমি অপরাধবিষয়ক ম্যাগাজিন অপরাধ জগৎ-এ নিয়মিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখেছি। এরপর বিনোদন, রাজনীতি, ও সমাজ বিষয়েও কাজ করেছি। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম থেকে আমরা প্রকাশ করি চার রঙের ম্যাগাজিন চট্টল চিত্র। এরপর দৈনিক খবর, দৈনিক আজাদী, এবং দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
সংবাদ এবং তার মৌলিক প্রশ্ন
সংবাদ হলো এমন একটি ঘটনা যা মানুষের মনে আলোড়ন তোলে। তবে প্রতিটি ঘটনা সংবাদ নয়। একটি সংবাদ গঠনে চারটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর থাকা জরুরি:
১. What? (কি ঘটেছে?)
২. Where? (কোথায় ঘটেছে?)
৩. When? (কখন ঘটেছে?)
৪. How? (কীভাবে ঘটেছে?)
উদাহরণস্বরূপ, একটি রেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে:
কি ঘটেছে?: একটি ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা।
কোথায় ঘটেছে?: কুমিল্লার কাছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে।
কখন ঘটেছে?: রাত ১০টায়। কীভাবে ঘটেছে?: দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন একই লাইনে এসে ধাক্কা লাগায়। এই চারটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সংবাদটি তৈরি হয়। সংবাদ অবশ্যই এমন হতে হবে যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতা এবং নতুন প্রজন্মের জন্য বার্তা
আমি ২০০৬ সালে নিজের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক সময়ের আলো পত্রিকা শুরু করি। ২০১৭ সাল থেকে দৈনিক সকালের সময়-এর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখেছি।সাংবাদিকতার পেশায় আমি দেখেছি, অনেকেই নিজেদের বড় সাংবাদিক দাবি করেন, কিন্তু তাদের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রকৃত সাংবাদিক হতে হলে পাঠ্য এবং গবেষণাধর্মী লেখালেখি করা আবশ্যক। চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফি সোসাইটি থেকে বেসিক কোর্স করে আমি বুঝেছি, কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব হলো সত্য প্রকাশ করা। কিন্তু সত্যের পথে হাঁটতে গেলে বাধা আসবেই। আজকের দিনে তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার সাংবাদিকতাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের প্রতি আমার আহ্বান, তারা যেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় মনোযোগ দেন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক কথা সাহিত্যিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com