গতকাল ১৩ই নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের হলে সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁর আগমনের আগেই আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছি।
চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্যুরো প্রধান ছোট ভাই তৌহিদের অনুরোধে অতিথি হিসেবে আমি সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষা এবং আধুনিক আইনের প্রয়োজনীয়তার উপর বক্তব্য রাখি। বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়ে নানা দেশ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। সুরক্ষা আইন, যা সাংবাদিকদেরকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করে, সেই আইনের অভাব বাংলাদেশে প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে। গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত সাংবাদিকরা এখানে বারবার হুমকির মুখে পড়ছেন, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জাঁতাকলে। শেখ হাসিনার সরকার প্রণীত এই আইনটি সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর একটি কঠিন দমনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের প্রকৃত স্বাধীনতার মুখে অন্ধকার নেমে আসে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা শিথিলতা এসেছে, তবে আইনটি এখনও বলবৎ থাকায় সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। সংবাদ সারাবেলা পত্রিকা এই কঠিন সময়ে সংবাদমাধ্যমের পক্ষে একটি সাহসী ভূমিকায় অবিচল রয়েছে। দেশ ও সমাজের জন্য জরুরি বিভিন্ন ইস্যুতে তারা অবিরত নির্ভীক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে, যা সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায় প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পত্রিকাটির এই অদম্য মনোভাব শুধু তাদের সফলতার প্রতীক নয়; বরং এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবাদমাধ্যমের অন্ধকার সময়ে তাদের এই অগ্রযাত্রা, সত্যের পক্ষে থাকা এবং সমাজের ন্যায়সংগত কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার জন্য সংবাদ সারাবেলা গর্বিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। গণমাধ্যমে যারা কাজ করছেন, তারা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে আছেন, বিশেষত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যুগে, যেখানে কথায় কথায় মামলা ও হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, সেখানে একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা এমন একটি আইনি কাঠামো আশা করি, যেখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সত্য প্রকাশ করতে পারবেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সংবাদ সারাবেলা তাদের প্রতিষ্ঠার পর থেকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, মানুষের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এসেছে। পত্রিকাটির নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং তাদের প্রতি আরও সাফল্য কামনা করছি। আশা করি, তারা আগামীতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মর্যাদা ও দেশের কল্যাণে একই রকম সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা—সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামকে আরও বেগবান করার। প্রিয় সহযোদ্ধারা,আজকের এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দৈনিক সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার নতুন অধ্যায়ের সূচনা উদযাপন করছি। আমাদের এই পথচলা শুধু একটি পত্রিকার নয়, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি অঙ্গীকারের পথচলা। গণমাধ্যমের প্রকৃত দায়িত্ব হলো সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, সমাজের প্রতিটি স্তরে সত্যকে প্রকাশের মাধ্যমে আলোর রেখা ছড়িয়ে দেওয়া। একসময় যে ভূমিকা সাংবাদিকদের ছিল জাতির দর্পণ হয়ে ওঠার, সেই দায়িত্ব আজ কিছু চাটুকার আর দালাল-সাংবাদিকদের হাতে পড়ে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, ম্লান হয়েছে। বহুদিন ধরে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী এই সংবাদসেবীদের কারণে গণমাধ্যম আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
তবে, আজকের এই সময়টাতে আমরা দেখছি পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী মনের বন্ধনে সংবাদমাধ্যম আজ এতটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল যে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা যেন এক কল্পনার রূপান্তর বলে মনে হতো। কিন্তু মানুষের আওয়াজ কখনো চুপ থাকে না। ৫ আগস্ট যখন ক্ষমতার পালাবদল ঘটলো, তখন সাথেসাথেই সংবাদমাধ্যমের জন্যে একটি নবযুগের বার্তা নিয়ে এলো। একটি মুক্ত স্বাধীন পরিবেশ যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে বলছে—এখনই সময়, গণমাধ্যমকে তার সত্যিকার কর্তব্য পালনের।
তাই আজকের এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে, যারা সংবাদ সারাবেলার নতুন যাত্রার সাথী হয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি—এ পথ চলতে হবে সাহসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে। আপনাদের প্রতিটি লেখায় ফুটে উঠতে হবে অসীম সাহস, নির্ভীকতার প্রতিচ্ছবি। শুধুমাত্র সংবাদ পরিবেশনের জন্যে নয়, গণমানুষের জন্যে, তাদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্যে এই কলম হাতে নিতে হবে। ইতিহাসে কোনো নামসর্বস্ব সাংবাদিকতা চিরস্থায়ী হয়নি; চিরস্থায়ী হয়েছে সেই সাহসী সাংবাদিকতা, যাদের কলম দিয়ে মানুষের অন্তরের কথা উচ্চারিত হয়েছে, শোষিতের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ন্যায়ের সুর। আজ, আমরা সেই সময়ে পৌঁছেছি, যখন কোনো মিথ্যে, কোনো কালো ছায়া আর সত্যকে আড়াল করে রাখতে পারবে না। আমাদের কলম হবে এমন এক তীক্ষ্ণ অস্ত্র, যা দুর্নীতির আবরণ ভেদ করে সবার সামনে আনবে সত্যকে। চাটুকারদের পিছু ছেড়ে, ক্ষমতার ভয়ে নত না হয়ে আমাদের উচিৎ হবে জনগণের মুখপাত্র হয়ে উঠা। আমাদের এই সংগ্রাম একা নয়, এটি পুরো জাতির সংগ্রাম; আমরা শুধু লিখবো না, আমরা গড়ে তুলবো এক ন্যায় ও সত্যের সমাজ। সংবাদ মাধ্যমের প্রতি এই দায়িত্ববোধ ও আনুগত্য ছাড়া সাংবাদিকতার পবিত্রতা আর বজায় থাকে না। তাই আজকের এই দিনে আমি প্রতিটি সাংবাদিক বন্ধুকে আহ্বান জানাই—চলুন, আমরা একসাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমাদের কলম শুধু তথ্য নয়, সত্য ও সাহসের প্রতীক হবে। দৈনিক সংবাদ সারাবেলা হোক সেই সাহসের আলো, যা ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি সমাজে। সংবাদমাধ্যমের এই শক্তি ও প্রতিশ্রুতি যেন আমাদের পথচলার প্রেরণা হয়ে থাকে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাই একটি সাহসী ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে, যা মানুষকে শুধু খবরই দেবে না, দেবে প্রেরণা, সাহস ও আত্মবিশ্বাস। সমাজের প্রতিটি অন্যায়, প্রতিটি নিপীড়ন, প্রতিটি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের লেখা হোক এক অমর সাক্ষী। সংবাদ সারাবেলার এই যাত্রা হোক চিরকাল সত্যের সঙ্গী।
লেখকঃ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও যুগ্ম সম্পাদক -দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily banner, গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com