কোনো এক গভীর রাতের নিশব্দতায়, যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে এবং বাতাসে চাঁদের আলোকরেখা মিশে যায়, তখন কিছু অদৃশ্য ঘটনা ঘটে যায়, যেগুলোর সাক্ষী হয় কেবল সেইসব নিরব মানুষেরা, যারা পৃথিবীর অন্ধকার কোণে নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। আমি তাদের মধ্যে একজন, সেইসব নিরব সাক্ষীদের একজন, যাদের চোখে ভেসে ওঠে অপরাধের অন্ধকার ছবি, যাদের অন্তরে প্রতিটি অপরাধের প্রতিধ্বনি বাজে। তিন যুগের দীর্ঘ যাত্রায়, আমি একাধিক অপরাধের ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। কিছু ঘটনা এতটাই চরম যে, সেগুলোর দুঃস্বপ্ন আজও আমাকে তাড়া করে। তবে, আমি সবসময় চুপ ছিলাম, আমার নিস্তব্ধতা আমার অস্তিত্বের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ, সেইসব ঘটনার কথা বলতে চাচ্ছি। কিন্তু, আমি জানি, এসব কথা প্রকাশ করতে গেলে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে, আর সেই সত্য এমন এক অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখবে, যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
তবে, আমি এই কাহিনীগুলো বাস্তবতার রঙে লিখব না। বরং, আমি কাল্পনিকতার আড়ালে, গল্পের চাদরে মুড়িয়ে প্রতিটি ঘটনার রূপ দেয়ার চেষ্টা করবো। কারণ, বাস্তবতা কখনও কখনও এতই ভয়াবহ যে, তাকে শব্দের গহ্বরে ধারণ করা অসম্ভব। তাই আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যদি কখনো এই কাহিনীর কোনো অংশ আপনার জীবনের বাস্তবতার সাথে মিলে যায়, তবে সেটি কেবল একটি স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ভাববেন। আমার কল্পনার জগতে, যেখানে কিছু ঘটনার দ্যোতনা গোপন থাকে, সেখানকার প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি ঘটনার মধ্যে কেবল একটি প্রশ্ন অনুরণিত হয়: সত্যি কি কখনো সত্যি হতে পারে?
এখানে আমি কথা বলবো তাদের সম্পর্কে, যারা অন্ধকার জগতের শাসক ছিল, যাদের পায়ের নিচে নিঃশব্দে ভেসে যেতো কতগুলো জীবন, কতগুলো স্বপ্ন। কিন্তু, কখনও তারা বুঝতে পারেনি, তাদের এই অন্ধকার রাজত্বের আওতায় আসা মানুষগুলোর হৃদয়ে লুকিয়ে ছিল এক অদৃশ্য প্রতিশোধের আগুন, যে আগুন একদিন তাদের পৃথিবীকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিবে। তবে আমি জানি, এরা সকলেই জীবন্ত ইতিহাস। তাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত কোনো না কোনো মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিছু ঘটনা হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে, কিছু ঘটনা দাঁড়িয়ে আছে রোদ্রোজ্জ্বল পৃথিবীতে। আমি শুধু সেই অন্ধকারের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরবো, তাদের জীবনকাহিনীর যে অংশ আমাদের অজ্ঞতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। কিন্তু আমি চাই, আমার লেখা যেন কোনো সত্যি গল্পের মতো
না হয়। আমি চাই, পাঠকরা একে শুধুমাত্র একটি কাল্পনিক রূপে দেখুন, যেন এটি কোনো এক অদৃশ্য স্বপ্নের মতন। তবে, এই কাহিনীগুলোর সাথে জড়িত প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি ঘটনা, কোনো না কোনো সময় তাদের সঙ্গেই ঘটে গেছে। আমার লেখার মধ্যে যদি তাদের জীবনের কোনো অংশ প্রতিফলিত হয়, তবে সেটিকে আপনি স্বপ্নের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন। এটাই আমার শেষ কথা। আমি শুধু আশা করি, যদি আপনি আমার এই গল্পটি পড়েন, তবে সেটি আপনার চোখে নতুন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে। আপনি বুঝবেন, এক একটি অন্ধকারের গল্প কেবল গল্পই নয়, বরং একটি ইতিহাসের অংশ হতে পারে।
সেই ফেলে আসা সোনালি দিনের কথা-৮৭/৮৮ সালের দিকে যখন আমি প্রথমবারের মতো লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা করার চিন্তা করি, তখন থেকেই আমার এক অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল গোয়েন্দাগিরি বইয়ের প্রতি। প্রতিটি বইয়ে এমন একটি রহস্য লুকানো থাকতো, যা আমাকে ক্রমশ আকর্ষণ করত। সেই বইগুলো পড়তে পড়তে আমি বুঝতে পারলাম, তথ্য সংগ্রহের জন্য শুধু বই পড়লেই হবে না, জীবনের গভীরে চলে যেতে হবে। তথ্য সংগ্রহে নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার জন্য, জীবনের নানা দিক থেকে মানুষের অজানা কাহিনির সন্ধান করতে হবে। আমি চেয়েছিলাম, আমার লেখা যেন জীবন্ত হয়, যেন সেগুলো শুধু কাগজের পাতায় বন্দী না হয়ে, মানুষের হৃদয়ে অনুভূতি জাগায়। সেই অনুভূতিকে শব্দে, বাক্যে, গাঁথায় পরিণত করতে হবে। তবে এ পথটা সহজ ছিল না। জীবনের নানা প্রতিকূলতা, অভ্যন্তরীণ সংকট, সমাজের অব্যবস্থাপনা—সবকিছু মিলিয়ে যেন এক খেলা চলছিল। আমি আমার লেখাকে শুধুমাত্র তথ্যপ্রসূত কাহিনি হিসেবে দেখতে চাইনি, বরং চাইতাম সেই কাহিনি গুলো যেন মানুষের অনুভূতি, তাদের সুখ-দুঃখ, তাদের জীবনের গভীরতাকে তুলে ধরে। আমার লেখায় যেন সেগুলোর ছাপ পড়ুক—তারা যেন সেই জীবনের অজানা অংশগুলো আবিষ্কার করে। আমি বিশ্বাস করতাম, শুধু তখনই আমি একজন সফল লেখক হতে পারব, যখন আমার লেখার প্রতিটি শব্দ পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেবে। তবে এই পথে অনেক সময় আমি একা ছিলাম। অনেক কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কখনো কখনো মনে হয়েছে, লেখার উদ্দেশ্য কি? কতদিন এই পথে চলতে হবে? কিন্তু সেই সময়গুলোর মধ্যেও আমার এক লক্ষ্য ছিল—আমি জীবনের সঠিক চিত্র তুলে ধরব। আমার কাজ ছিল, যেসব কাহিনি গোপনে ছিল, যেগুলো কখনো প্রকাশিত হয়নি, সেগুলো মানুষকে জানানো। সেই অজানা কাহিনিগুলোই আমার লেখা হয়ে উঠেছে। কখনো তা মানুষের মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছে, কখনো বা সমাজের অন্ধকার দিকগুলো প্রকাশ পেয়েছে। এখন, যখন আমি পিছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, আমি এক জীবন্ত খেলা খেলেছি। এক খেলা যেখানে কখনো আমি জয়ী হতে পারিনি, কিন্তু তাতে কোনও পিছু হটিনি। কারণ, এই খেলার আসল জয় তখনই হবে, যখন আমি সততা, সাহস আর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারব। এবং সে সময়, আমার লেখাও মানুষের জীবনে এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।
চলবে----
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com