বাটালি হীলের সান্নিধ্যে অবস্থিত শতায়ু অঙ্গন গত পহেলা নভেম্বর শুক্রবার সকালে এক বিশেষ ও স্মরণীয় মিলনমেলার আয়োজন করেছিল। এখানের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ, এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এক প্রশান্তির স্থান। এ বছর, শতায়ু অঙ্গন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে উঠেছে—প্রকৃতির প্রতি মানবতার দায়বদ্ধতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার চেতনা। অনুষ্ঠান ও এর পরিবেশ সকাল বেলা, সূর্য উঁচুতে উঠতে শুরু করতেই, শতায়ু অঙ্গন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বহু বন্ধু, প্রতিবেশী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে উপস্থিত হন। একে অপরের সঙ্গে হাসি-হাসি মুখে স্বাগতম জানান, যেন তারা এই আয়োজনের অংশ হয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। সবুজ গাছপালা, খোলামেলা আকাশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হাঁটার জন্য এই আয়োজন এক নিখুঁত ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
জাকির উল্লাহ, শতায়ু অঙ্গনের সভাপতি, অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে। তিনি প্রকৃতি ও স্বাস্থ্য সচেতনতাকে সমন্বিত করে একটি নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, বরং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রচার করা।
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বৃক্ষরোপণের অংশ হিসেবে, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বৃদ্ধ ও যুবক সকলেই এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। গাছ লাগানোর সময় সবাইকে বোঝানো হয়, গাছ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবেশ রক্ষায়, অক্সিজেনের জোগান দিতে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির একটি বিশেষত্ব ছিল, অংশগ্রহণকারীরা প্রতিটি গাছের নামকরণও করেন। প্রতিটি গাছের জন্য একটি করে নাম দেওয়া হয়, যেন তারা ওই গাছটির প্রতি দায়িত্ববোধ অনুভব করতে পারেন। এটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যেখানে সামাজিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কও দৃঢ় হয়। শারীরিক চর্চা ও নতুন উদ্যোগ শারীরিক চর্চার জন্য মাঠের টাইলস লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন টাইলস মাটিকে আরও আকর্ষণীয় ও ব্যবহার উপযোগী করে তুলবে, যাতে সাধারণ মানুষ ও বিশেষ করে যুব সমাজ শারীরিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এ মাঠটিতে শরীরচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও সংযোজন করা হবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার এক নতুন সূচনা করবে।
জাকির উল্লাহ বলেন, “আমরা এখানে শরীরচর্চার একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এটি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমর্থন করবে।” নাস্তার আয়োজন ও বন্ধুত্বের বন্ধন এই মিলনমেলার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল নাস্তার আয়োজন। স্থানীয় পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে সব ধরণের ফল, সবজি এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের সমাহার ছিল। উপস্থিত সবাই মিলে খাবার গ্রহণ করেন, যা এক ভিন্ন মাত্রার বন্ধুত্বের স্বাক্ষর রাখে। নাস্তার সময় একে অপরের সঙ্গে গল্প ও আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে পরিবেশটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সবাই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা এই ধরনের অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ আবেদন। নতুন সূর্যের উন্মোচন শতায়ু অঙ্গনের আজকের এই আয়োজন ছিল এক নতুন সূর্যের আবির্ভাব। যেখানে প্রকৃতি, মানুষ এবং স্বাস্থ্য একত্রিত হয়েছে, সেখানে এক নতুন সমাজের সূচনা হতে চলেছে। এই সবুজ বেষ্টনীর মাঝে, হাঁটার বন্ধুদের একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করল—“স্বাস্থ্যই আমাদের প্রথম সম্পদ”। শতায়ু অঙ্গনের এই উদ্যোগ প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধনের এক নিখুঁত উদাহরণ। আশা করা যায়, এই আন্দোলন সমাজে নতুন প্রেরণা নিয়ে আসবে, যেখানে স্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও বন্ধুত্বের চেতনা প্রবাহিত হবে। এই মিলনমেলা শুধুমাত্র এক অনুষ্ঠানের প্রতিফলন নয়, বরং একটি নতুন সমাজের দিকে পরিচালিত করার একটি পদক্ষেপ। শুক্রবার এই আনন্দ উল্লাসের অনুষ্ঠানে, আমরা স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শতায়ু অঙ্গনের ঐতিহ্য এবং এর পেছনে যারা অবদান রেখেছেন, তাদেরকে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই, বিশিষ্ট শিল্পপতি নাদের খান আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যিনি এই উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত। তাঁর নৈকট্য এবং সমাজসেবা নিয়ে কাজ করার মনোভাব আজকের অনুষ্ঠানে সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে।
হুমায়ুন সাহেবের ভূমিকা এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য। তিনি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশের উন্নয়নে নিবেদিত। আজকের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা যারা এই বাটালি হিলের সবুজায়নের জন্য কাজ করেছি, তাদের প্রতিটি গাছ একটি নতুন আশা এবং পরিবেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা।” তাঁর এই উক্তি শুধু পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং আমাদের সামাজিক দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। জিপিএসএ’র কর্ণধার শিমুল ভাই, যিনি সারা জীবনে অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং শিশুদের জন্য বিশেষ গেঞ্জির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেন। তাঁর এ উদ্যোগ শিশুদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাহ জালাল এবং অধ্যাপক জসিম সাহও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শাহ জালাল সাহেব তার বক্তব্যে প্রকৌশল এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা বিষয় তুলে ধরেন, যা আমাদের দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, “প্রকৌশল আমাদের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে।” এই অনুষ্ঠানে আমাদের কয়েকজন সন্তানের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়, যা তাদের পরিশ্রম এবং উদ্যমের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত। আমার নাতি কাশিবও সেখানে ছিল এবং ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করে। এই পরম্পরা আমাদের সমাজে মূল্যবোধ ও সহানুভূতির চেতনাকে তুলে ধরে। নাদের খান সাহেব আগামী শীতে এক হাজার কম্বল বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন, যা সমাজের অসহায় মানুষদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সহায়তা। শিমুল ভাইয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জিপিএসএ গেঞ্জি বিতরণের মাধ্যমে আমরা শিশুদের মধ্যে আরও উৎসাহ প্রদান করতে পারব।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মধ্যে এক অসাধারণ সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমরা একত্রে আমাদের পরিবেশ এবং সমাজের উন্নয়নে একত্রিত হয়েছি। অনুষ্ঠানের শেষে, সবাই মিলে নাদের খান সাহেবের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করলাম। তাঁর নেতৃত্ব এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল অম্লান থাকবে। আজকের এই অনুষ্ঠান কেবল একটি উৎসব নয়, বরং আমাদের সমাজের উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার একটি নয়া শুরুর প্রতীক। আসুন, আমরা সকলেই এই উদ্যোগে অংশ নিয়ে এগিয়ে আসি, যাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম একটি সুন্দর এবং সবুজ পৃথিবী পেতে পারে।
লেখকঃ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও যুগ্ন সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily banner এবং গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com