চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল বর্তমানে আইসিইউ, সিসিইউ, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে, তবে এসব সেবা পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে বলেন, “ডায়াবেটিক হাসপাতালটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত হলেও সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন বিহীন সেবা চালানো হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অনুমোদন থাকা প্রয়োজন।" তিনি বলেন, “হাসপাতালে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আমি দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে বলেছি যাতে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত না হয়।”
গত ৬ অক্টোবর শনিবার থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন।
তাদের যুক্তিগত আন্দোলনের সাথে জীবন সদস্যদের প্রতিবাদী সংগঠন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতাল রক্ষা পরিষদ একত্রতা পোষণ করেন,
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, “জাহাঙ্গীর চৌধুরী হাসপাতালকে ব্যক্তিগত স্বৈরতন্ত্রের স্তম্ভ বানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়। গত সাত-আট বছরে কর্মীদের কোনো ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন পদে তার প্রায় ৪৬ জন আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অনেকেরই যোগ্যতা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে হাসপাতালের দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে এবং সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জন অফিসেও অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।”
আর্থিক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রকাশ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের স্টাফদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তাছাড়া বারডেম থেকে বছরে প্রাপ্ত ২ কোটি টাকা অনুদানের কোনো হিসাবও নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে এবং কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দকৃত ১৭ লাখ ৫০ হাজার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব উম্মে হাবিবার স্বাক্ষরিত এক আদেশে ৩১ আগস্ট তাকে ১৫ দিনের মধ্যে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়। তবে তিনি এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির অভ্যন্তরীণ অনিয়ম
জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কারণে সমাজসেবা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তদন্তের আওতায় আনে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে একটি রিপোর্টে জানায়, বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধ কার্যকলাপের কারণে চট্টগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে গত ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি হাসপাতালের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীর চৌধুরী এ নিয়োগের বিরুদ্ধেও আদালতে রিট করেন। উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া স্থগিতাদেশের কারণে তিনি এখনো হাসপাতালের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন।
চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতালের এমন অবস্থার মধ্যে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়া এবং হাসপাতালে কর্মরত কর্মীদের মানসিকভাবে চাপে থাকা খুবই উদ্বেগজনক। স্থানীয় জনগণ ও সেবাগ্রহীতারা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে যাতে হাসপাতালের কার্যক্রম শৃঙ্খলায় ফিরে আসে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ডায়াবেটিস হাসপাতালের চলমান সমস্যা ও অনিয়মের বিষয়ে ১০ই অক্টোবর বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাথে এক বিশদ সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি তথাকথিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিভিন্ন অনিয়ম ও অপকর্মের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এতবছর ধরে একটি হাসপাতাল কীভাবে সরকারের কোনো অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হতে পারে, তা দেখে আমি বিস্মিত। স্বাস্থ্য সেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতের এমন বেহাল অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। জাহাঙ্গীর চৌধুরী নিয়মিত বিভিন্ন পদে অনিয়মের মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। হাসপাতালের তহবিলের অর্থ লোপাটসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে।"
সিভিল সার্জন আরও জানান, "চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালকে বৈধতার আওতায় আনতে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা আপাতত পাঁচ সদস্যের একটি সরকারি প্রতিনিধিত্বকারী কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছি। এই কমিটি হাসপাতালের বর্তমান ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবে। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে হাসপাতালটি আরও দক্ষ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হবে। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীকে আরও ভালো স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।"
সাক্ষাৎকার শেষে ডা. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, "আমরা এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করব এবং প্রয়োজনে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই আমরা এই হাসপাতালকে একটি বৈধ এবং সঠিক নিয়মাবলীর মধ্যে পরিচালিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।"
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com