চট্টগ্রাম ৬ আসনের সাবেক এমপি এবিএম ফজলুল করিম চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়ে ওঠা তার নানা অপকর্মের সিন্ডিকেটের মধ্যে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ফজলে করিম চৌধুরীর পাচারকৃত টাকায় আমিরাতে গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়েও এই সিন্ডিকেটের মধ্যে নানা ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যে।আওয়ামীলীগের এই এমপি কালো টাকার পাহাড় লোকানোর জন্য তার নিজ এলাকা সহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে এই সিন্ডিকেট প্রায় ১০ কোটি টাকা পাঠান বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক সেক্টর সহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার বাহিনীর কাছে।হাজার হাজার বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বুকের গুলি চালানোর জন্য এই সিন্ডিকেটের বিশাল ভূমিকা রয়েছে বলেও জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।
মাফিয়া ফজলে করিম দুবাইতে শত শত কোটি পাচার, টাকার ভাগাভাগি নিয়ে অসন্তুষ্ট দেখাদিয়েছ।
আন্দোলন ঠেকানোর জন্য ১০ কোটি টাকা দিয়েছিল দেশের প্রশাসনকে। রাউজানে খলনায়ক অপরাধ জগতের সম্রাট বহু হত্যার নায়ক আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি ফজলে করিম গ্রেফতারে পর দুবাইতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, ফজলে করিম আমিরাতে গড়ে তুলেছিল দেশ থেকে টাকা পাচার পাচারকৃত টাকার সিন্ডিকেট, সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাউজান নিয়ন্ত্রণ করাসহ চালাতো সকল ধরনের অপকর্ম, হত্যা রাহাজানি থেকে শুরু করে কিছুই বাদযায়নি, ফজলে করিম করেনি, তাই দুবাই থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ফজলে করিমের কিছু অজনা কথা তুলে ধরছি।
অনুসন্ধানের দেখা যাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে করিম চৌধুরীর অপকর্মের মূল হোতা হিসেবে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম উঠে আসে । এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে গ্যারেজ ফরিদ, খোরশেদ জামান, নজরুল ইসলাম, সেলিম চৌধুরী, মুসা প্রকাশ চায়না মুসা, আবুল কাশেম, মোহাম্মদ আজগর হোসেন, মোঃ আক্তার হোসেন,আল আইনের ব্যবসায়ী ইউনুস মিয়া চৌধুরী,ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আইয়ুব, আবুধাবিস্থ আইয়ুব স্টিলের মালিক আইয়ুব চৌধুরী,জবরুদ স্টিলের মালিক জবরুদ খান চৌধুরী,আবুধাবী মুসাফ্ফা এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোরশেদ, দুবাইয়ের হোটেল ব্যবসায়ী নুরুন্নবী রওশন,হাট কাটা আবছার, নুরুল আমিন, প্রকাশ বডুয়া আমিন, ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ, মোহাম্মদ সোলায়মান, ওমান চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি ইয়াসিন চৌধুরী,ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোঃ জসিম, নুরুল আফসার বাবলু,সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডক্টর হাসান মাহমুদ ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যবসায়িক পার্টনার সিএনজি জসিম,সারজার ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মহিন, এরশাদ হোসেন হিরো, এস আলম গ্রুপের নিকট আত্মীয় জাহাঙ্গীর আলম,এস আলম ও জেনারেল আজিজের ছোট ভাই জোসেফের টাকা পাচারের হোতা আব্দুল মালেক,ইঞ্জিনিয়ার জাফর চৌধুরী।এসব ব্যক্তিদের নিয়ে ফজলে করিম চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলো।চট্টগ্রামের এ এমপি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব ব্যক্তিদের দিয়ে নামে বেনামে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।কালো টাকা গোপন করার জন্য আবির ভেজিটেবল মার্কেটে খোরশেদ জামান ও নজরুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তিকে দিয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাউজান সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে।বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ঠিকাদারি ও রেল মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ পথে আয়ের টাকা খোরশেদ জামান ও নজরুলের কাছে পাচার করতো এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।হুন্ডির মাধ্যমে পাচারকৃত এই টাকা সিন্ডিকেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছে সমপরিমাণ ভাগ করে রাখা হতো।
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকা কালীন সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত দেশেও এই সিন্ডিকেটের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেতোনা। সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশীরা বিক্ষোভ করলে সে সব সাধারণ প্রবাসীদের তালিকা তৈরী করে বাংলাদেশ কন্সূলেটের কন্সাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেনের কাছে জমা করেন এই সিন্ডিকেট। এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছাড়াও এস আলম গ্রুপ, সাবেক আর্মি চিফ জেনারেল আজিজ,জোসেফ,চট্টগ্রাম সিতাকুন্ড ২ আসনের এম পি মামুন, নোয়াখালীর এমপি নিজাম হাজারী,সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরী,সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর হাসান মাহমুদ, হাটহাজারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস গনি চৌধুরী,ফটিকছড়ি ৫ আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি,সাবেক মেয়র আ জ ম নাসির, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু, রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রকাশ ঘি বাবুল,পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ সহ একাধিক ব্যক্তির পাচারকৃত টাকা তাদের কাছে জমা রয়েছে।এদিকে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ সিন্ডিকেটের মধ্যে অনেকটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।কেউ কেউ রাউজানের সাবেক বি এন পি সমর্থিত এমপি গিয়াস কাদের চৌধুরীর কাছে গিয়ে নিজেদের অপরাধ গোছানোর জন্য নিকুজিশনের চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তন হলে তাদেরকে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আরব আমিরাতের বাসভবনে গিয়ে ফুলের তোরা দিয়ে নিজেদের বোল্ট পাল্টানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি এবং ইউএই রাউজান প্রবাসী ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহৃবায়ক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন আমলে রাউজানের সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সিন্ডিকেট ও টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, পাহাড়ি বনাঞ্চল উজাড়, ব্রিক ফিল্ড, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলসহ নানা অপকর্মের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। যার অত্যাচারে হাজার হাজার রাউজানবাসী গ্রাম ছেড়ে শহর, শহড় ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে। অনেকে পরিবারের কাছে ফেরা দূর কি বাত, মা-বাবার কবর জিয়ারতের জন্যও যেতে পারেনি নিজ গ্রামে। হাজার হাজার প্রবাসী দিনের পর দিন প্রবাসী নির্বাসনে থেকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে টুঁশব্দ করতে পারেননি। ডুকরে কেঁদেছেন একলা ঘরে। ফজলে করিমের হামলা, মামলা আর অবর্ণনীয় অত্যাচারের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য রাউজানবাসী। শুধু রাউজান নয়, তার আধিপত্য ছড়িয়ে ছিল আমিরাতসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। আরব আমিরাতে তার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাঙ্গোপাঙ্গরা গড়ে তুলেছিল এক বিশাল সিন্ডিকেট। কালো টাকা পাচারসহ সেগুলোকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে বিনিয়োগ করাই ছিল তাদের কাজ।
দুবাইস্থ রাউজান সমিতির আহ্বায়ক খোরশেদ জামানের শারজার বাগানবাড়িতে ফজলে করিমের ছিল আমোদ ফুর্তির আসর। সেখানে নারী সরবরাহ করতো দুবাইয়ের কুখ্যাত নারী ও হোটেল ব্যবসায়ী হাতকাটা আফসার, বাড়ুয়া আমিন ও রওশন নামের তিন নারী ব্যবসায়ী। রাত হলেই দেরা জনার্ঢ ও আল দাগাইয়া হোটেলে ফজলে করিমের সাঙ্গোপাঙ্গরা সবসময় নারী আর মদ নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে মেতে থাকতো। শুধু তাই নয়, এসব হোটেলে বসে সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করতো ফজলে করিম চৌধুরী। রাউজানের কুখ্যাত এই আওয়ামী লীগ নেতা আটক হওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রবাসী ও তাদের স্বজনরা। ফজলে করিম চৌধুরীসহ আমিরাত ও রাউজানে গড়ে ওঠা তার গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com