চট্টগ্রাম-ট্রাফিক পুলিশের টোকেন বাণিজ্য বর্তমানে কিছুটা মন্দা থাকলেও, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার টোকেন বাণিজ্য চলতো—যা ছিল "ওপেন সিক্রেট"। এই বাণিজ্য এমনভাবে গড়ে উঠেছিল যে, যা একসময় অনিয়ম হিসেবে দেখা হতো তা নিয়মে পরিণত হয়। জনগণের বন্ধু হিসেবে পরিচিত পুলিশ, আজ কেন সাধারণ মানুষের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, তা এই টোকেন বাণিজ্যের চিত্র দেখলে বোঝা যায়। চট্টগ্রাম শহরের টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ তৈরি করেছে, তা একেক করে প্রকাশ করব।
চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথায় প্রায় এক বছর ধরে দায়িত্বে আছেন টি আই কামরুজ্জামান। তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে নিজেকে আল্লাহ ওয়ালা দেখিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তবে তার এই সাধুর অভিনয় যে লোকদেখানো, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার টোকেন বাণিজ্যের হিসাব থেকে। কামরুজ্জামান প্রতি মাসে কাপ্তাই রোডের সিএনজি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ১৪ নম্বর রোডের মার্কেট চলাচলরত সিএনজি ও টেম্পু থেকে ৭০ হাজার টাকা, বোয়ালখালী থেকে আসা সিএনজি থেকে (পান আনোয়ারের মাধ্যমে) ৭০ হাজার টাকা আদায় করেন। এছাড়াও চাঁদগাঁও এলাকায় অবৈধভাবে চলাচলরত অটোরিকশা থেকে (বেলালের মাধ্যমে) ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, বোয়ালখালী থেকে আগত টিকটিকি থেকে ৮০ হাজার টাকা, মৌলভীবাজার ওয়াসার রোডে চলাচলরত গ্রাম সিএনজি থেকে ৩০ হাজার টাকা, কাজীরহাট প কামাল বাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য চলাচলকৃত গাড়ি থেকে নগদ আদায় করতেন। এই টোকেনের এজেন্ট হলো জয়নাল নামে তাদের ক্যাশিয়ার, যিনি ট্রাফিক পুলিশের চাঁদা আদায় করে আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক। তার বর্তমানে প্রায় ১০টি গাড়ি রয়েছে।
অন্যদিকে, বোয়ালখালী উপজেলায় দায়িত্বরত সার্জেন্ট নুরুল আলম প্রতিমাসে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি করতেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান হলো: বোয়ালখালীতে ২০০টি ড্রামট্রাক থেকে প্রতি ট্রাকে ১,২০০ টাকা করে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৫০০টি সিএনজি থেকে প্রতি সিএনজি ৫০০ টাকা করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১,০০০টি হায়েজ মাইক্রো থেকে প্রতি গাড়ি ১,৮০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৩০০টি অটোরিকশা থেকে ৬০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এবং টিকটিকি টেম্পু থেকে প্রতি গাড়ি ৫০০ টাকা করে ১৮০টি টিকটিকি থেকে ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া, দৈনন্দিন শহরে প্রবেশ করা গাড়ি আটক করে নগদ চাঁদা আদায় করা হতো। এই আদায়কৃত টাকার বড় অংশ তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের, আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এবং তথাকথিত সাংবাদিকদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। এই টাকা বাণিজ্য দীর্ঘ বছর ধরে চলছে, বিশেষ করে গ্রাম সিএনজি, টিকটিকিসহ অবৈধভাবে চলাচলরত গাড়িগুলোকে রাস্তা ব্যবহার করতে হলে তাদের টোকেন কিনতেই হতো। কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও বোয়ালখালীতে বিভিন্ন নামসর্বস্ব সাংবাদিক ও পুলিশের নামে এই ধরনের অসংখ্য অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে। টি আই কামরুজ্জামান ও সার্জেন্ট নুরুল আলমের এই চাঁদাবাজি করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হওয়ার ঘটনা একটি গভীর অনুসন্ধান দাবি করে। তাদের এই টোকেন বাণিজ্যের বিষয়ে আরও তদন্ত করলে আরও অনেক রহস্য উন্মোচিত হবে। তথাকথিত চাঁদাবাজ সাংবাদিকরাও তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন। বিগত সময়ের দেশব্যাপী হরিলুটের ঘটনাগুলো একের পর এক প্রকাশ পাচ্ছে, আর সেইসাথে ট্রাফিক পুলিশের এই চাঁদাবাজি।
বোয়ালখালীর সার্জেন্ট নুরুল আলম নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং কেউ তার চাঁদাবাজির বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের সাথে তার সখ্যতার কথা বলতেন। তাদের সাথে মাসিক ভিত্তিতে টোকেন চুক্তি ছাড়া কেউ সিএনজি, টিকটিকি বা টেম্পু চালাতে পারত না। এই টি আই কামরুজ্জামান ও সার্জেন্ট নুরুল আলম টোকেন না দিলে গাড়ি আটক করে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন।
এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আরও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আসা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com