সারা দেশে যখন ছাত্র জনতার আন্দোলন তুঙ্গে, তখন কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে, মানসিক নির্যাতন চালিয়ে মোটা অংকের ঘুষ আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এমনই এক পুলিশ সদস্য হলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মিনহাজ। তিনি তার সময়কালে গ্রেফতার বাণিজ্যে শীর্ষে ছিলেন এবং নিজেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা বলে প্রচার করতেন। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার দাবি করে তিনি গর্বের সাথেই সেটি প্রচার করতেন। এসআই মিনহাজ দীর্ঘ সময় ধরে বোয়ালখালী থানায় ছিলেন, মাঝে বদলি হলেও আবার ফিরে আসেন। তিনি এলাকায় নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। পাহাড় থেকে বাংলা মদ ও ইয়াবার চালান সরাসরি তদারকি করা থেকে শুরু করে দলের কিছু চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জায়গা দখল ও টোকেন বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্ম পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, তার গ্রেফতার বাণিজ্য ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। আন্দোলন দমনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন মানুষকে রাতে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসতেন এবং মোটা অংকের ঘুষ আদায় করতেন। তার ভয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে থাকত, এমনকি মসজিদের ইমাম সাহেবেরও ঘুম হারাম হয়ে যেত। মিনহাজের অপকর্মের সাথেও সমাজের ভূমি দস্যু, চোর-ডাকাত, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ও মাদক ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিল। তাদের সাথে নিয়ে তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন এবং রাতে গ্রেফতার বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। এলকায় টাকা ওয়ালা প্রবাসী পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত থাকার অভিযোগ দেখিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। এসআই মিনহাজের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন পশ্চিম গোমদন্ডির নামসর্বস্ব যুব লীগ নেতা প্রবাসী দিদার। দিদারের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপির নিবেদিত পরিবার শামসুল আলমকে নানা ধরনের হয়রানি করা হয়েছে। শামসুল আলমকে পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নগদ টাকা ঘুষ দেওয়াসহ মাছ-মাংস ও সবজির উপটোকনও দিতে হয়েছে। দিদার মিনহাজকে কাজে লাগিয়ে রাতে বিভিন্ন নেশাখোরদের দিয়ে শামসুল আলমের বাড়িতে হামলা করাতেন এবং মদ্যপ অবস্থায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাতেন। শামসুল আলম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলন চলাকালে দিদারের পরামর্শ অনুযায়ী মিনহাজ একাধিকবার তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেন। শামসুল আলমের বাড়িতে কেন গিয়েছিল তা জানার জন্য আমি এসআই মিনহাজকে মোবাইল করলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দেননি। অবশেষে, মিনহাজের অত্যাচারের কারণে শামসুল আলমকে তার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। আমি এই বিষয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখেছিলাম। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও মিনহাজদের মতো অসাধু পুলিশ অফিসাররা এখনো সপদে রয়েছেন। অন্যদিকে, বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসাব উদ্দিন কক্সবাজার কুতুবদিয়ার জামাত ও বিএনপির মনোভাবের সন্তান হওয়ায় তিনি কোনো থানায় ভালোমতো ওসি গিরি করতে পারেননি। মিনহাজের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশদের কারণে তার অপকর্মের অনেক কিছুই ওসির কাছে গোপন থাকত। ওসি আছহাব উদ্দিনের ভালো আচরণ এবং শেখ হাসিনা সরকারের অবৈধ নির্দেশ মেনে নিয়ে বোয়ালখালীর সাধারণ মানুষের ওপর ধরপাকড় ও রাজনৈতিক হয়রানি না করার ফলে, দেশের বেশিরভাগ থানায় হামলা হলেও বোয়ালখালী থানায় কোনো ধরনের হামলা হয়নি। এর কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র ওসি আছহাব উদ্দিন। স্থানীয় মানুষের মতে, এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকলেও, ওসির আন্তরিকতার কারণে এলাকার মানুষ থানায় কোনো ধরণের সমস্যা হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com