বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ আজ নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। রাষ্ট্র সংস্কার কিংবা পরিবর্তনেরন বাতাস চারিদিকে। দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হচ্ছে। ঝেটিয়ে বিদায় করা হচ্ছে সকল অপশাসন। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি,সাংস্কৃতিক কর্মী, শ্রমিক সহ আপামর মানুষের জীবন এবং রক্ত রাঙা এক বিজয়। ৫ আগস্ট ছিল বাঙালি জাতির জন্য নতুন এক বাংলাদেশের হাতছানি। রক্ত রঞ্জিত এই বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে দেশের ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ঠ দল বিএনপির কাঁধে আজ বিশাল দায়িত্ব। সারা জাতি আজ তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে। সেই প্রত্যাশা পুরণে আজ দলের ভূমিকা কোনদিকে। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে ফেস বুকের ওয়াল। নিজের হাসি মাখা ছবি অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের হাসি মাখা রঙ্গিন ছবি দিয়ে রাঙ্গানো ফেবু হায় লজ্জা!তুমি কি লজ্জা পাও?এরা দলের অনুসারী, এরা নেতা, এরা কর্মী জাতীয়তাবাদী চেতনায় তারা ফেসবুক ভাসায়। সত্যি বলতে গেলে বলা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফেসবুক দল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন আসছে, রাজপথে র আন্দোলন সংগ্রামে।জেগে উঠছে সাধারণ মানুষ, জাগছে দলের নেতা কর্মীরা।
জিয়াউর রহমানের আদর্শিক ও সাংগঠনিক অবস্থান থেকে সরে এসেছে দল। যে কারণে প্রত্যাশা পুরণে ব্যার্থ হচ্ছে শতভাগ।
জিয়াউর রহমান দল গড়েছিলেন জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য। গণমানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে গণমুখি শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করার লক্ষে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সেই সব আদর্শ থেকে সরে গেছে অনেক দুর। দলের মধ্যেই এখন গণতন্ত্রের চর্চ্চা নেই। সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল। সবাই ব্যাস্ত পদ ধরে রাখতে। একেক জন ২.৩, ৫টি করে পদবী বহন করছেন। কেউ কেউ পদ বানিজ্যে ব্যাস্ত। জনগণ কিংবা কর্মীরা এখন আর নেতা নির্বাচন করতে পারে না৷ নেতা বানিয়ে দেন আরো উপরের অযোগ্য, ব্যার্থ রাবিশ কোন নেতা টাকার বিনিময়ে, পকেটের লোক, আত্মীয়, তেলবাজ, মতলববাজদের। যাদের জনতগণ কিংবা কর্মী সমর্থকদের সাথে নেই কোন সম্পর্ক। নেই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহস কিংবা মনোবল কোনটাই নেই। বড় নেতারা পদ পদবী ব্যাবহার করে ছোট নেতা বানায়। এভাবেই শহীদ জিয়ার প্রাণের সংগঠন আজ মুখ থুবড়ে পরেছে। জিয়া পরিবারের উপর একের পর এক আঘাত। ছিন্ন-ভিন্ন করে দিচ্ছে একজন বীর মুক্তি যোদ্ধার পরিবার, একজন সাবেক সেনা প্রধানের পরিবার কে। বার বার নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয়হীন করে রাস্তায় বের করে দেয়। নিরব তার দলের লক্ষ কোটি নেতা-কর্মী। একজন দেশ প্রেমিক সাবেক রাষ্ট্রপতি, দলের প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের সন্তানদের দেশ থেকে বিতারিত করা হয়, অবাক বিস্ময়ে দল, দলের নেতারা তাকিয়ে রয়। বিদেশের মাটিতে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় মুক্তিযোদ্ধা সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর সন্তান, অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় লাখ, কোটি নেতা কর্মী তাকিয়ে রয়। তাকিয়ে দেখে সারা বিশ্ব নিরবতায় চেপে যায় মানবতা, মানবাধিকারা দেশে গণতন্ত্র নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ভোটাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার, নিরাপত্তা নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই নাগরিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকারে গ্যারান্টি নেই। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে এর জন্য দায়ী কে? শুধু কি শাসকদলের উপর দায় চাপানো যাবে? ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ে এদেশের বড় দলের ব্যার্থ তার খাতায় বিএনপির নাম ও লেখা হবে।
এখনো সময় আছে ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অঙ্গিকারে ঘুরে দাঁড়ানোর। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জিয়ার আদর্শ ফিরিয়ে আনুন। জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচিত করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে । আযোগ্য পদ বানিজ্য করা নেতাদের ৪টি ৫টি পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নেতাদের এবং দলকে ভারমুক্ত করার। প্রকৃত অর্থে বিএনপি কে তার আপন চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে জিয়া পরিবারকেই সরাসরি নেতৃত্বের জায়গায় আসতে হবে। তৃণমূলের সাহসী, দেশপ্রেমী, আদর্শিক, সাহসী, বিচক্ষণ দের পদ পদবী দিয়ে দলের দেশের আগামী মেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এক কথায় আপোষহীন নেত্রীর, আপোষহীন দলে, রাজপথের সংগ্রামী, জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবীত মানুষের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। তবে প্রাণ ফিরে আসবে দলে। গতি ফিরবে আন্দোলনে, চেতনায় শানিত হবে শহীদ জিয়ার আদর্শ।
১৯৭৮ খৃস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫ টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা 'প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজধানী ঢাকার রমনা রেস্তোরায় এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করার মাধ্যমে দলেরআনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন জিয়াউর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) ১৯৭৭ খৃস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল তার শাসন ক্ষমতাকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) গঠন করা হয়। যার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। পরবর্তী পর্যায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাগদল
বিলুপ্ত করে জিয়াউর রহমানের সমন্বয়ে বাংলাদেশজাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যাত্রা শুরু করে। মধ্য ডান পন্থী এই দলে বাম ডান, মধ্যপন্থীদের সমন্বয় ঘটানো হয়। এই দলের তখনকার প্রধান বৈশিষ্ট ছিল ৪৫ ভাগ সদস্য রাজনীতিতে একেবারেই নতুন ও বয়সে তরুন তরুন। দলের নির্বাচনী প্রতিক ধানের শীষ ও দলীয় শ্লোগান 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ- জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ নির্ধারণ করা হয়। ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৯ মে সেই ১৮ জন সহ ৭৬ সদস্যের প্রথম আহবায়ক কমিটির নাম ঘোষণা হয়। আহবায়ক: জিয়াউর রহমান
সদস্য : বিচারপতি আবদুস সাত্তার মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মোহাম্মদ উল্লাহ, শাহ আজিজুর রহমান, ক্যাপ্টেন অব: আব্দুল হালিম চৌধুরী, রসরাজ মন্ডল,আবদুল মোমেন জামাল উদ্দিন আহমেদ,ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মির্জা গোলাম হাফিজ, ক্যাপ্টেন অব: নূরুল হক, সাইফুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান মওদুদ আহমেদ, শামসুল হক চৌধুরী, এনায়েত উল্লাহ খান, এস এ বারী এটি.ড. আমিনা রহমান, আবদুর রহমান, ডা. এম এ মতিন, আবদুল আলিম, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নুর মোহাম্মদ খান আবদুল করিম, শামসুল বারী, মুজিবুর রহমান ডাঃ ফরিদুল হুদা, শেখ আলী আশরাফ, আবদুর রহমান বিশ্বাস, ব্যারিস টার আবদুল হক, ইমরান আলী সরকার, দেওয়ান সিরাজুল হক এমদাদুর রহমান এডভোকেট আফসার উদ্দিন কবীর চৌধুরী, ড. এম আর খান, ক্যাপ্টেন অব সুজাত আলী তুষার কান্তি বারবি সুনীল গুপ্ত, রেজাউল বারী ডিনা,আনিসুর রহমান, আবুল কাশেম, মনসুর আলী সরকার, আবদুল হামিদ চৌধুরী, মনসুর আলী, শামসুল হক, খন্দকার আবদুল হামিদ, জুলমত আলী খান, এডভোকেট নাজমুল হুদা, মাহবুব আহমেদ, আবু সাঈদ খান, মোহাম্মদ ইসমাইল, সিরাজুল হক মন্টু শাহ বদরুল হক আবদুর রউফ, মোরাদুজ্জামান, জহিরুদ্দিন খান, সুলতান আহমেদ চৌধুরী, শামসুল হুদা সালেহ আহমদ চৌধুরী, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী তরিকুল ইসলাম, আনোয়ারুল হক চৌধুরী মাইনুদ্দনি আহমেদ, এম এ সাত্তার, হাজী জালাল, আহমদ আলী মন্ডল, শাহেদ আলী, আবদুল ওয়াদুদ, শাহ আবদুল হালিম, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার, আতাউদ্দি যান, আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী, আহমদ আলী *
বিএনপির মূলনীতি ও লক্ষ ছিল; অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এর ভিত্তিতেই জিয়া তার ১৯ দফা ঘোষণা করেন।
বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি ছিল---
১. সৃষ্টি কর্তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা
২. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ
৩. গণতন্ত্র
৪. অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র যার সংক্ষিপ্ত লক্ষ উদ্দেশ্য :
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক ইস্পাত কঠিন গণ ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও সুসংহত করা।
উৎপাদনের রাজনীতি, মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক মানব মুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন। জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামে-গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং সার্বিক উন্নয়ন মুখী পরিকল্পনা ও দক্ষতা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া। এমন এক সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় সমাজের মৌলিক স্তরে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ট মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়।
এমনি একটা সুস্পষ্ট ও স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নিশ্চিতি দেওয়া যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারেন। বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা।
শহীদ জিয়ার হাতে গড়া দলের স্টেয়ারিং এখন কার হাতে? এই দলের আগমীর প্রত্যাশা এখন কোন পথে?
৪৪বছর আগের সেই বিএনপি আজ আর নেই। নিশ্চিত করেই বলা যায় ইতিহাসের আস্তা কুঁড়ে মুখ লোকায় সত্যের প্রদীপ। এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় দলটির সাংগঠনিক শক্তি আর রাজনৈতিক অর্জন নেতৃত্বের অভাবে বিলিন হয়ে গেছে। যেই দলের লাখ লাখ নেতা কর্মী সারা দেশ জুড়ে। এদেশের প্রতি ঘরে একজন কর্মী আছে যে দলের সেই দলের মায়ের মতো নেত্রী, যে বয়সের ভারে নতজানু তাকে জেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে দিন কাটাতে হয় বছরের পর বছর। দল আজ না কাল পরশু না আমাবশ্যায়, পূর্ণিমায় আন্দোলন করবে বলে জাতিকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখায়। এইদেশ, এই মাটি ও মানুষের জন্য, দলের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অসামান্য। গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসী, দেশ মাতা, দেশনেত্রী শেষ বয়সে এসে কি পেয়েছে দলের কাছে? কি পেয়েছে এই দেশের কাছে? দেশের মানুষের কাছে? দু ফোটা অশ্রুজল! বার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান
গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, জনতার ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে মামলার শিকার হয়, জেলে যায় নিভৃতে নিঃশ্বেষ হয়। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে কোটি নেতা কর্মী।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com